বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালী উপন্যাসের সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন-উত্তর
১। ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসটির রচয়িতার নাম কি?
উ: ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসের রচয়িতা হলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ।
২। বিভূতিভূষণের জন্ম সালটি উল্লেখ করো ।
উ: বিভূতিভূষণের জন্ম ১৮৯৪ এর ১২ই সেপ্টেম্বর।
৩। ‘পথের পাঁচালী’ কোন পত্রিকা প্রথম প্রকাশিত হয় ?
উ: সাহিত্যিক উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের পত্রিকা ‘বিচিত্রা’তে প্রকাশিত হয় ‘পথের পাঁচালী’।
৪। কোন সালে ‘পথের পাঁচালী’ প্রকাশিত হয় ?
উ: ১৩৩৫ সালে ‘পথের পাঁচালী’ প্রকাশিত হয়।
৫। ‘পথের পাঁচালী’ পুস্তক আকারে কবে প্রকাশিত হয় ?
উ: ১৯২৯ সালের ২রা অক্টোবর অর্থাৎ ১৩৩৬-এর ১৬ই আশ্বিন ‘পথের পাঁচালী’ পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়।
৬। ‘পথের পাঁচালী’ ক’টি পরিচ্ছেদে বিভক্ত?
উ: ‘পথের পাঁচালী’ পঁয়ত্রিশ (৩৫টি) পরিচ্ছেদে বিভক্ত।
৭। হরিহরের ক্ষুদ্র কোঠাবাড়িটির অবস্থান নির্ণয় করো।
উ: নিশ্চিন্দিপুর গ্রামের একদম উত্তর প্রান্তে হরিহর রায়ের ক্ষুদ্র কোঠাবাড়ি।
৮। ইন্দির ঠাকরুণ কে?
উ: হরিহরের দূর সম্পর্কীয় দিদির নাম ইন্দির ঠাকরুণ।
৯। হরিহর রায়ের পূর্ব পুরুষের আদি বাড়ি কোথায় ছিল?
উ: নিশ্চিন্দিপুর গ্রামের প্রতিবেশী গ্রাম যশড়া-বিষ্ণুপুরে ছিল হরিহর রায়ের পূর্বপুরুষের আদি বাড়ি।
১০। হরিহর রায়ের পিতার নাম কি?
উ: হরিহর রায়ের পিতা ছিলেন রামচাঁদ রায়।
১১। বিশ্বেশ্বরী কে?
উ: ইন্দির ঠাকরুণের কন্যার নাম ছিল বিশ্বেশ্বরী সে বিবাহের অল্প কিছুদিন পরেই মারা যায়।
১২। সর্বজয়া কে?
উ: হরিহরের পত্নী হলেন সর্বজয়া।
১৩। ‘খোকা প্রায় দশ মাসের হইল’—খোকার পরিচয় দাও।
উ: সর্বজয়ার সদ্যোজাত পুত্রকে এখানে খোকা বলে অভিহিত করা হয়েছে। তাকে দেখতে রোগা, অসম্ভব রকমের ছোট মুখ। নীচের মাড়িতে মাত্র দুটি দাঁত সম্বল। কারণে অকারণে সে সেই দু-খানি মাত্র দুধের দাঁত বের করে হাসে।
১৪। “বীণার বিয়ে কোথায় হল’–বক্তা কে? বীণা কে? বীণার বিয়ে কোথায় হয়েছিল?
উ: বক্তা হল হরিহর। বীণা হল হরিহরের ছোট শ্যালিকা। তার বিবাহ হয়েছে কুডুলে বিনোদপুরে।
১৫। ‘স্বর্ণ গোয়ালিনী দুধ দুইতে আসায় কথাটা চাপা পড়ে গেল’—কোন কথাটি চাপা পড়ে গেল ?
উ: অপু-দূর্গার সর্বজয়াকে লুকিয়ে আম খাওয়ার প্রসঙ্গ চাপা পড়ে গেল স্বর্ণ গোয়ালিনীর আগমনে। আসলে অপু ও দুর্গা সর্বজয়ার অনুপস্থিতে কাঁচা আম তেল, নুন দিয়ে খেয়েছিল তারপর হঠাৎই সর্বজয়ার সামনে অপু মুখ ফসকে আম খাবার কথা বলে ফেললে পরিস্থিতি অন্য দিকে যাবার আগেই স্বর্ণ গোয়ালিনীর আগমনে সে পরিস্থিতি চাপা পড়ে যায়।
১৬। ‘সে তো অন্নদামঙ্গলে আছে’—অন্নদামঙ্গল কি?
উ: ১৭৫২-৫৩ এর মধ্যে রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র ‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্যটি রচনা করেন। দেবী অন্নদার মাহাত্ম্যজ্ঞাপক এই কাব্যের তিনটি খণ্ড। অন্নদামঙ্গল, কালিকামঙ্গল ও অন্নপূর্ণামঙ্গল ৷
১৭। ‘সে তো অন্নদামঙ্গলে আছে’– অন্নদামঙ্গলে কি আছে?
উ: অন্নদামঙ্গলে হরিহোড়ের কাহিনী আছে, যা অপু তার মা সর্বজয়ার কাছে শুনতে চেয়েছিল।
১৮। “মহাভারতের সমস্ত চরিত্রের মধ্যে কর্ণের চরিত্র তাহার বড়ো ভালোলাগে।’—কেন ?
উ: মহাভারতের সমস্ত চরিত্রের মধ্যে কর্ণের চরিত্র অপুর বড়ো ভালো লাগে কারণ বিপন্ন নায়ক কর্ণের উপর তার বড়ো মায়া হয়। কর্ণের রথের চাকা মেদিনী গ্রাস করলে, সেই অবস্থায় নিরস্ত্র অসহায় কর্ণকে অর্জুন তীর ছুঁড়ে হত্যা করেন। কর্ণের যন্ত্রনায় সমব্যথী হয়ে অপু তাকে বড়ো ভালোবাসে।
১৯। ‘‘...তাহার মনে হয় যুদ্ধ জিনিসটা মহাভারতে বড়ো কম লেখা আছে।”— তার অভাব পূরণ করার জন্য অপু কি পন্থা নিয়েছিল ?
উ: অপু একটা বাখারি কিংবা হালকা কোন গাছের ডালকে অস্ত্র স্বরূপ হাতে নিয়ে তা বাড়ির পিছনে অবস্থিত বাঁশবাগানের পথে অথবা বাইরের উঠানে ঘুরে বেড়ায় ও এক বৃহৎ কাল্পনিক যুদ্ধের আয়োজন নিজের মনে মনে করতে থাকে। এভাবেই সে মহাভারতের অভাব নিজের কল্পনা শক্তির সাহায্যে মিটিয়ে নেয়।
২০। ‘সে তখন একবারে আনকোরা টাটকা নতুন সংসারে আসিয়াছে।’’— কার কথা কোন প্রসঙ্গে বলা হয়েছে?
উ: শিশু অপুর কথা এখানে বলা হয়েছে। ছোট্ট অপু যখন শৈশব জনিত চাপল্যের সাথে তার মার সঙ্গে খেলা করত তখন সে কতই না আনন্দিত হত। তার আনন্দ প্রসঙ্গেই এই মন্তব্যটি করা হয়েছে।
২১। “কেন ভাই ওদের তাড়িয়ে দিলে তুমি ভারী হিংসুক কিন্তু সতুদা।”—বক্তা কে? সতুদা হিংসুক কেন?
উ: বক্তা হল রাণু। সোনামুখী তলায় কালবৈশাখীর সময় ঝড়ে পড়ে যাওয়া আম কুড়োতে গেলে অপু ও দুর্গাকে তাড়িয়ে দেয় সতু। তখন দুর্গার ‘চোখের ভরসা হারা চাহনি’— দেখে অন্তরে ব্যথিত হয়ে রাণু একথা বলেছে সতুকে।
২২। ‘নামতা মুখস্ত রত অপুর মুখ অমনি অসীম আহ্লাদে উজ্জ্বল হইয়া উঠিত।’—কেন ?
উ: পাঠশালায় বিকেলের দিকে অপুর গুরুমশায়ের সাথে গ্রামের অনেক মানুষ, যেমন দীনুপালিত, রাজু রায় প্রমুখরা গল্প করতে আসেন, তবে রাজকৃষ্ণ সান্যাল নামক ব্যক্তির গল্প শুনতে বড়ো আগ্রহী থাকত অপু। তাই তার আগমনে অপুর এমন অবস্থা হত।
২৩। ‘এই যে প্রসন্ন, কি রকম আছো, জাল পেতে বসেছো যে, কটা মাছি পড়লো ?’- বক্তা কে? বক্তব্য পরিস্ফুট করো।
উ: বক্তা হলেন রাজকৃষ্ণ সান্যাল। প্রসন্ন হলেন পাঠশালার গুরুমশাই। রাজকৃষ্ণ সান্যালের বক্তব্যানুসারে গুরুমশাই এর পাঠশালা হল ‘জাল’ ও ছাত্ররা হল ‘মাছি’। অর্থাৎ তার পাঠশালায় কেমন ছাত্র ভর্তি হচ্ছে জানতে চাইছেন কৌতুকের ছলে রাজকৃষ্ণ স্যানাল।
২৪। ‘অচেনা ছেলেটির উপর বধূর বড় মমতা হইল’—ছেলেটি ও বধূর পরিচয় দাও।
উ: এখানে ‘ছেলেটি’ হল অপু ও ‘বধূ’ টি হলেন লক্ষ্মণ মহাজনের ছোট ভাই এর স্ত্রী। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য লক্ষ্মণ মহারাজ হলেন হরিহর রায়ের শিষ্য।
২৫। ‘মায়ের উপর করুণায় ও সহানুভূতিতে তাহার মন ভরিয়া উঠিল।’ —কার কথা বলা হয়েছে? তার এরূপ মনে হওয়ার কারণ কি?
উ: এখানে অপুর কথা বলা হয়েছে। অপু লক্ষ্মণ মহারাজের ছোট ভাই এর স্ত্রীর হাতের
বানানো অসাধারণ মোহন ভোগ খেয়ে যখন অত্যন্ত তৃপ্ত ও বিস্মিত,
তখন তার মনে পড়ল তার মায়ের বানানো মোহন ভোগের কথা। সে
বুঝল তার মায়ের বানানো মোহন ভোগ আর এ মোহন ভোগ আকাশ পাতাল তফাৎ। তখনই মায়ের ওপর
করুণায় ও সহানুভূতিতে তার মন ভরে উঠল আর তখনই তার এমন মনে হয়েছিল।
২৬। ‘তাহারা গরীব—তাই তাহাদের বাড়ি ভাল খাওয়া দাওয়া হয় না।’ —অপুর এমন উপলব্ধির কারণ কি?
উ: লক্ষ্মণ মহারাজের ছোট ভাই এর স্ত্রী হাতের বানানো অসাধারণ মোহন ভোগ খেয়ে অপুর মনে হয়েছিল তার মায়ের বানানো মোহন ভোগের সাথে এ মোহন ভোগের আকাশ-পাতাল তফাৎ। তখন অপু এই তফাৎ এর কারণ খুঁজতে গিয়ে এই উপলব্ধি করেছিল।
২৭। অমলা কে?
উ: অপুর বাবা হরিহরের শিষ্যবাড়ি হল লক্ষ্মণ মহারাজের বাড়ি, সেটা অন্য গ্রাম। সেই গ্রামেরই মেয়ে অমলা। সে বয়সে দুর্গার মত। অপুর সাথে তার ভালো বন্ধুত্ব হয়েছিল।
২৮। ‘অপুর কাছেও বোধহয় শাস্তিটা কিন্তু বেশী কঠোর বলিয়াই বোধ হইল।’ —কোন শাস্তির কথা বলা হয়েছে?
উ: অপুর সাথে ঝগড়া করার অপরাধে সর্বজয়া দুর্গার পুতুলের বাক্স টান মেরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল। এখানে এই শাস্তির কথাই বলা হয়েছে।
২৯। শূন্য মাগে বিচরণের উপায় যে পুস্তকটির মধ্যে অপু পেয়েছিল তার নাম কি?
উ: ‘সর্ব-দর্শন-সংগ্রহ’ নামের বইতে এই বিদ্যা শেখানো ছিল।
৩০। ‘পারদের গুণ বর্ণনা করিতে লেখক লিখিয়াছেন’ লেখক কে? তিনি কি লিখেছেন?
উ: ‘সর্ব-দর্শন-সংগ্রহ’ নামক পুস্তকের জনৈক লেখকের কথা এখানে বলা হয়েছে। তিনি পারদের গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছিলেন যে শকুনির ডিমের মধ্যে পারদ পুরে কয়েকদিন রৌদ্রে রেখেছিল, সেই ডিম মুখে পুরে মানুষ শূন্যে বিচরণ করতে পারে।
৩১। ‘তাহার পর কি ঘটিল সে কথা না তোলাই ভালো’ –কার পর কি ঘটেছিল সংক্ষেপে বর্ণনা করো।
উ: শূন্যমার্গে বিচরণের জন্য অপু বহু কষ্টে দুটি শকুনের ‘ডিম’ সংগ্রহ করেছিল যা তার দিদি দুর্গার অনবধান বশতঃ ভেঙে যায় এরপরই অপু ক্রুদ্ধ হয়ে যা-যা করেছিল তার বর্ণনা না দেয়াই ভালো বলে লেখকের মন্তব্য ।
৩২। ‘মাঝে মাঝে অপু গিয়া বৃদ্ধের নিকট হাজির হয়।’ —বৃদ্ধের পরিচয় দাও।
উ: বৃদ্ধ বলতে এখানে গ্রামের বয়স্ক নরোত্তম দাস বাবাজির কথা বলা হয়েছে, যাঁর সাথে অপুর খুব ভাব।
৩৩। ‘আমি মরবার সময় বইখানা তোমাকে দিয়ে যাবো দাদু’—বক্তা ও শ্রোতা কে? কি বই এর কথা বলা হয়েছে?
উ: বক্তা হলেন গ্রামের বৃদ্ধ নরোত্তম দাস বাবাজি। শ্রোতা হল অপু। বইটি হল ‘প্রেমভক্তি—চন্দ্রিকা’।
৩৪। ‘পদকর্তা ছিলেন বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস’ —বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাসের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উ: বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাস উভয়েই হলেন পদকর্তা, বিদ্যাপতি ছিলেন মিথিলার কবি। মাথুর ও ভাবসম্মিলনের পদে বিদ্যাপতি ছিলেন তুলনারহিত। আর চণ্ডীদাস ছিলেন পূর্বরাগ পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবি, প্রসঙ্গতঃ বলা ভালো, উভয়েই ছিলেন চৈতন্য পূর্ববর্তী পদকর্তা।
৩৫। ‘আর যদি সে না ফেরে, যদি নিতম পিসির মত হয় ?’ —কার কথা এখানে বলা হয়েছে? নিতম পিসি কে?
উ: এখানে দুর্গার কথা বলা হয়েছে। নিতম পিসির বিবাহ হয়েছিল বহুদূর মর্শিদাবাদ জেলায়। তারপর তার খবর আর কেউ পায়নি। তবে আত্মীয় পরিজন সবাই মারা গেছে। দুর্গা তার পৈতৃক ভিটের কাছে দাঁড়িয়ে ভাব ছিলো বিবাহের পর তারও যদি এমন দশা হয়।
৩৬। ‘আজকের আনন্দ! সামান্য, সামান্য ছোটখাটো তুচ্ছ জিনিসের আনন্দ।’ —প্রসঙ্গ উল্লেখ পূর্বক ব্যাখ্যা করো ।
উ: অপু, দুর্গা ও বিনি যৎসামান্য আয়োজনে বনভোজন করে একদিন রান্নায় নানা ত্রুটি থাকলেও তাদের আনন্দে কোন ঘাটতি ছিল না। এই ক্ষুদ্র ভোজন প্রসঙ্গেই লেখকের এই মন্তব্য।
৩৭। ‘তবে রে পাজি, নচ্ছার ছোখরা বড়, তুমি জিনিস দেবে না’ —বক্তা ও উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কে? কোন জিনিসের কথা বলা হয়েছে?
উ: বক্তা হলেন সেজ ঠাকরণ (ভুবন মুখুয্যের বাড়ির) ও উদ্দিষ্ট ব্যক্তিটি হল দুর্গা। এখানে জিনিস বলতে টুনির মায়ের সোনার সিঁদুর কৌটার কথা বলা হয়েছে।
৩৮। ‘বড্ড ছেলেমানুষ আহা এই বয়সে বেরিয়েছে, নিজের রোজগার নিজে করে।’—ছেলেমানুষ কে? তার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও ।
উ: গ্রামে যাত্রাদলে অভিনয় করতে আসা ছোট ছেলে ‘অজয়’ কেই এখানে ছেলেমানুষ বলা হয়েছে। তার কেউ নেই। সে নানা গ্রামে যাত্রাদলের সাথে যাত্রা করে বেড়ায়।
৩৯। ‘জীবন বড়ো মধুময়, শুধু এই জন্য যে এই মাধুর্যের অনেকটাই স্বপ্ন ও কল্পনা দিয়ে গড়া।’ —প্রসঙ্গ উল্লেখ পূর্বক ব্যাখ্যা করো।
উ: হরিহর কাশী থেকে যখন ফিরে এসেছিল তখন সে ও সর্বজয়া সকলেই বলত তার ভবিষ্যৎ বড়ো উজ্জ্বল। খুব তাড়াতাড়িই সে কোন বড়ো চাকুরী পাবে। কিন্তু তা হয় না। তারা শুধুই কল্পনাই করে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের, কিন্তু তা সত্যি কিছুতেই হল না। এ প্রসঙ্গ লেখকের এই দার্শনিক উক্তি।
৪০। ‘দুর্গার অশান্ত, চঞ্চল প্রাণের নেশায় জীবনের সেই সর্বাপেক্ষা বড় অর্জুনের ডাক আসিয়া পৌঁছিয়াছে।’ —ব্যাখ্যা করো।
উ: ম্যালেরিয়াতে আক্রান্ত দুর্গা, যন্ত্রণাকাতর সে। হঠাৎ একদিন ঝড়বৃষ্টির রাতের শেষ সকালে তার মৃত্যু ঘটে। তার শত চঞ্চলতা কেড়ে নেয় নীল শীতল মৃত্যু। তার মৃত্যু প্রসঙ্গেই লেখকের এই মন্তব্য ।
৪১। ‘আধঘণ্টার মধ্যে পাড়ার থেকে উঠনে ভাঙ্গিয়া পড়ল’—কেন ?
উ: ম্যালেরিয়ায় চঞ্চল দুর্গার মৃত্যু সংবাদ শুনে গ্রামের বহু লোকের সমাগম হয়েছিল হরিহরের বাড়িতে। এর কারণেই ‘উঠান ভাঙ্গিয়া পড়িল’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
৪২। ‘মা যে আমাদের ফাঁকি দিয়ে চলে গিয়েছে গো’—বক্তা ও উদ্দিষ্ট ব্যক্তির পরিচয় দাও । ‘মা’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে ?
উ: বক্তা হলেন সর্বজয়া ও উদ্দিষ্ট ব্যক্তিটি হল হরিহর এবং মা বলতে মৃত দুর্গার কথা বলা হয়েছে।
৪৩। ‘‘আজকাল সে দুইখানা বই পাইয়াছে ‘মহারাষ্ট জীবন প্রভাত’-ও ‘রাজপুত জীবন সন্ধ্যা’’— গ্রন্থদুটির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উ: বঙ্কিম সমসাময়িক ঔপন্যাসিক রমেশচন্দ্র দত্ত বিরচিত দুটি উপন্যাস হল ‘মহারাষ্ট্র জীবন প্রভাত’ ও ‘রাজপুত জীবন সন্ধ্যা’। ‘মহারাষ্ট জীবন প্রভাত’ তাঁর রচিত শ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক উপন্যাস। ঔরঙ্গজেবের রাজত্বকালে শিবাজীর নেতৃত্বে মহারাষ্ট্র শক্তির গৌরব ও উদ্দীপনার অভ্যুত্থান ও মুঘল সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে শিবাজীর স্বাধীনতা সংগ্রামই তার উপজীব্য বিষয়। ‘রাজপুত জীবন সন্ধ্যা’ উপন্যাসে দেশ প্রেমের স্বরূপ চিত্রিত হয়েছে।
৪৪। ‘গ্রামের মধ্যে একটা কানা ভিখারী একতারা বাজাইয়া গান গাহিয়া ভিক্ষা করিতেছে’–কি গান গেয়েছিল ভিখারীটি।
উ: ভিখারী যে গানটি গেয়েছিল তা হল “দিন দুপুরে চাঁদের উদয় রাত পোহানো হল ভার। ...’’ অপুর মতে এই গানটি তার বোষ্টম দাদু ভালো গায়।
৪৫। ‘ধূলা ও মাকড়সার ঝুল মাখা হইলেও জিনিসটা কি বা তাহার ইতিহাস বুঝিতে তাহার বাকি রহিল না।’—কোন জিনিসের কি ইতিহাসের কথা বলা হয়েছে?
উ: জিনিসটি হল সেজ ঠাকরণের বাড়ি থেকে চুরি যাওয়া টুনির মায়ের সোনার সিঁদুর কৌটা। এই সিঁদুর কৌটা চুরির অপরাধে দুর্গাকে অনেক অপমান, প্রহার ও তিরস্কার সহ্য করতে হয়েছিল।
৪৬। ‘এরূপ অপরূপ বসন্তদৃশ্য অনুজীবনে এই প্রথম দেখিল।’ —উল্লিখিত বসন্ত দৃশ্যের পরিচয় দাও।
উ: বাংলার বসন্ত, চৈত্র বৈশাখের মাঠে, বনে, বাগানে, যেখানে-সেখানে, কোকিলের এলোমেলো ডাকে, নব পল্লব নাগনেশর গাছের অজস্র ফুলের ভারে, বনফুলের গন্ধভরা জ্যোৎস্নাস্নিগ্ধ দক্ষিণ হাওয়ার উল্লাসে আনন্দনৃত্য শুরু করেছে। এমন অসাধারণ বসন্তদৃশ্য অপু জীবনে এই প্রথম দেখেছিল।
৪৭। ‘তাহার উত্তরকালের শিল্পী জীবনের কল্পনামুহূর্তগুলি মাধুর্যে ও প্রেরণায় ভরিয়া তুলিবার তাহাই ছিল শ্রেষ্ঠ উপাদান।’—প্রসঙ্গ নির্দেশ পূর্বক ব্যাখ্যা করো।
উ: বাংলার অপরূপ বসন্তদৃশ্য দেখে, বাংলার নদী, মাঠ ইত্যাদির অসাধারণ দৃশ্য অপুর মনে যে মায়াঙ্গন এঁকে দিয়েছিল, তার উত্তরকালের শিল্পীজীবনের কল্পনা মুহূর্তগুলি মাধুর্যে ও প্রেরণায় ভরে তুলছে তাই ছিল শ্রেষ্ঠ উপাদান—একথাই বলা হয়েছে আলোচ্য পঙ্ক্তিটিতে।
৪৮। ‘আজ কিন্তু সত্য-সত্যিই দিদির সহিত চিরকালের ছাড়াছাড়ি হইয়া গেল।’—কেন ?
উ: দুর্গার মৃত্যুর পর হরিহর ও তার পরিবার গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। তখন রেলগাড়িতে বসে যাবার পথে অপুর মনে হয়েছিল এই গ্রাম ছেড়ে যাওয়া মানে তার দিদির সত্ত্বাকে সম্পূর্ণ ঝেড়ে ফেলে চলে যাওয়া। তখন অপুর এমন মনে হয়েছিল।
৪৯। ‘পুরাণ পাঠ করা তাহার কিছু নতুন ব্যবসায় নহে’—কার কথা এখানে বলা হয়েছে ? সে এখন কোথায় পুরাণ পাঠ করে ?
উ: হরিহরের কথা এখানে বলা হয়েছে। সে এখন দশশ্বমেধ ঘাটে বসে পুরাণ পাঠ করে।
৫০। ‘কথকতার শেষ পূরবী সুরের আশীর্বচনটি তাহার ভারী ভাল লাগে।’ —আশীর্বচনটি উল্লেখ করো।
উ: আশীর্বচনটি হল -’কালে বর্যতু পর্জন্যং পৃথিবী শস্যশালিনী লোকাঃ সন্তু নিরাময়াঃ।’
৫১। ‘পরের বাড়ী নিতান্ত পরাধীন চোরের মত থাকা সর্বজয়ার জীবনে এই প্রথম।’ –পরের বাড়ী বলতে কি বোঝানো হয়েছে?
উ: হরিহরের মৃত্যুর পর গ্রাসাচ্ছাদনের জন্য সর্বজয়াকে রান্নার কাজ নিতে হয় এক ধনী ব্রাহ্মণের ঘরে। এই বাড়ীকেই সর্বজয়া পরের বাড়ি বলেছে।
৫২। অপুর পোশাকী নাম কি?
উ: অপূর্ব কুমার রায় হল অপুর ভালো নাম ।
৫৩। ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসে ঘটিত তিনটি মৃত্যুর উল্লেখ করো।
উ: প্রথমে ইন্দির ঠাকরুণ, তারপর দুর্গা ও সবশেষে হরিহরের মৃত্যু ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাস কে বিষাদ মণ্ডিত করে তুলেছে।
৫৪। লীলা কে?
উ: সর্বজয়া যে ব্রাহ্মণের বাড়ীতে রান্নার কাজ গ্রহণ করেছিল সেই বাড়ির মেজবৌরানীর মেয়ের নাম লীলা। সে অপুর বান্ধবী।
৫৫। ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসের প্রথম পরিচ্ছেদের শিরোনাম কি?
উ: ‘বল্লালী-বলাই’ হল প্রথম পরিচ্ছেদের শিরোনাম।
৫৬। ‘এ গাল যেন ওদের না লাগে। দোহাই ঠাকুর ওদের তুমি বাঁচিয়ে বর্তে রেখো ঠাকুর।’ —বক্তা কে? গাল কে দিয়েছিলো কাকে ?
উ: বক্তা হল সর্বজয়া। সেজ ঠাকরুণ (ভুবন মুখুজ্যের বাড়ির) তার গাছের নারকেল নেওয়ার অপরাধে অপু ও দুর্গাকে গাল দিলেছিল।
৫৭। অপুর উপনয়নের কালটি লেখো।
উ: জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি সময়ে সর্বজয়া অপুর পৈতে দেন।