রবীন্দ্রনাথের ঘরে বাইরে উপন্যাসের অমূল্য চরিত্র
ঘরে বাইরে উপন্যাসের অপ্রধান উল্লেখযোগ্য চরিত্র অমূল্য:
অমূল্য
‘ঘরে বাইরে’ উপন্যাসের একটি অপ্রধান এবং উল্লেখযোগ্য চরিত্র। অমূল্য নিখিলেশের
ভক্ত। বয়সের দিক থেকে বালক। বিমলা বলেছে সে কচি মুরুলী বাঁশির মতো সরল ও সরস। অমূল্যকে
বিমলার কাছে প্রথম নিয়ে আসে সন্দীপ। বিমলার কাছ থেকেই অমূল্য দেশপ্রেমের কথা শুনে
উদ্বুদ্ধ হয়। সন্দীপের কথাতে সে বিলেতি জিনিস বয়কটের আন্দোলনে যোগ দেয়।
অমূল্য
মায়াময় চরিত্র। বিলিতি জিনিস কিনলে ক্রেতার কাছ থেকে তা জোর করে কেড়ে পোড়ানোর
কথায় এবং মামলা যারা করবে তাদের গোলায় আগুন ধরাবার কথায় সে ভয় পায়। দেশের
জন্য টাকার প্রয়োজন। এই বলে বিমলা অমূল্যকে খাজাঞ্চির কাছ থেকে টাকা বের করে আনতে
বলে। অমূল্য দেশকে ভালোবাসে। তাই সে রাজি হয়। সে ভাবে বাজার লুট করে টাকা আনবে।
সেই টাকা খাজাঞ্চিকে ঘুষ দিয়ে বশ করে টাকা বের করার চেষ্টা করবে। এ বুদ্ধি
ছেলেমানুষের। তবু রিভলবার বের করে দেখিয়ে বলে দরকার হলে খাজাঞ্চিকে শেষ করে দেবে।
সন্দীপ
তাকে সম্মোহিত করে রাখে। সন্দীপের শেখানো কথাই সে বলে। তাই অমূল্যর কোনো নিজস্বতা
দেখা যায়নি। সন্দীপ একসময় বলে অমূল্য তার ছায়ার ছায়া। প্রতিধ্বনির প্রতিধ্বনি।
সন্দীপ পাশ থেকে সরে গেলে অমূল্য কিছু নয় ।
চপলতায়
ভরা ছোট্ট ছেলে অমূল্য। বিমলা যখন তার রিভলবারটি চায় সে দিয়ে দেয় ৷ জেনে যায়
বিমলা ওটা দিয়ে মরণ প্র্যাকটিস করবে। অমূল্য উত্তেজিত হয়ে বলে—এটাই
তো চাই দিদি। মেয়েদের মারতে হবে। মরতেও হবে। দেশের জন্য মারতে তার ভয় নেই। মরতেও
না। বিমলার কাছ থেকে সন্দীপবাবু টাকা নিয়েছে এটা সে মানতে পারে না।
প্রথমে
অমূল্য বিমলার গহনা বিক্রি করতে রাজি হয়নি। বিমলাকে সে ছ’হাজার টাকা যেখান থেকে
হোক এনে দেবে কথা দেয়। শেষে বিমলার চাপে গহনা বিক্রি করতে রাজি হয় অমূল্য।
বিমলার কথা সে ফেলতে পারে না। বিমলাকে সে দিদির মতো ভাবে। মায়ের মতো ভাবে।
সরলতায়
আচ্ছন্ন অমূল্য ছেলেমানুষি ভাব নিয়ে দেশের কাজে এসেছে। সে আদর্শকে মানতে চায়।
দেশের কাজে নিজেকে সঁপে দিয়েছে। ভণ্ড দেশপ্রেমিকদের ভুল প্ররোচনায় তার মতো কত
সরল বালকদের কত করুণ অবস্থা হয়েছে রবীন্দ্রনাথ যেন সেই বিষয়টিকেই অমূল্যর মধ্যে
দেখাতে চেয়েছেন। আর এখানেই এই চরিত্র সৃজনের সার্থকতা।